জেনে রাখা ভালো
ধূমপানকে আজকের দিনের যুবসমাজ ফ্যাশন বলেই মনে করেন। অনেকেই মনে করতে পারেন এটাকে স্মার্টনেসের একটি মাধ্যম হিসেবে। কিন্তু আসল ব্যাপার মোটেই তা নয়। ধূমপান এমনই একটা অভ্যাস যেটার শুধু ক্ষতিকর দিকই বিদ্যমান। তার কোন ইতিবাচক গুণাগুণ নেই। একজন ধূমপায়ী যেমন নিজের ক্ষতি করেন, তেমনই ক্ষতিগ্রস্থ হন তার আশপাশের লোকজন। যাদের মধ্যে থাকতে পারে তার পরিবারের সদস্য, ছেলে-মেয়ে, সহপাঠী, সহকর্মী। অনেকেই বোঝেন যে এটা ক্ষতিকর। ছেড়ে দেয়া উচিত।
“আজ খাই, কাল ছাড়বো, এই মাস যাক আগামী মাসে বন্ধ করে দিব” এভাবে ধূমপানে আসক্ত ব্যক্তি অনেক সময় নিজেকে প্রতারিত করতে থাকে। ধূমপান মৃত্যু ডেকে আনে জেনেও সে বিষ পান করে যায় তৃপ্তি ভরে। অনেকে মাঝে মাঝে ধূমপান করে আর ভাবে ছেড়ে দেবে। কিন্তু আসক্ত হয়ে পড়লে সেটা আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে অসম্ভব কিছু নয়, প্রয়োজন শুধু ইচ্ছাশক্তি আর আপজনদের সহযোগিতা।
একটু চেষ্টা আর উদ্যম থাকলে শরীর যেমন সুস্থ থাকবে তেমনি নিজের পরিবার সুস্থ থাকবে। একই সঙ্গে অর্থের অপচয়ও রোধ হবে। প্রতিমাসের সিগারেট বাবদ টাকা গুলো যদি জমানো হয় তবে তা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। একমাত্র চেষ্টাই পারে নিজের পাতানো মৃত্যুফাঁদ হতে নিজেকে বাচাঁতে।
চলুন জেনে নেয়া যাক ধূমপান ছাড়ার সহজ কিছু টিপস্
মনের জোর:
মনের জোর যত বেশি থাকে তত তাড়াতাড়ি ধূমপান থেকে সরে আসা যায়। জেনে নেয়া যাক সেসব বিষয় যা একজন ধূমপায়ীকে ধীরে ধীরে অ-ধূমপায়ীতে পরিণত করতে পারে।
মন স্থির করুন:
ধূমপান ছাড়ার প্রথম ধাপ হলো মনে মনে এর জন্য তৈরি হওয়া। সাথে সাথে একটি দিন বেছে নেয়া যে দিন থেকে আর ধূমপান করবেন না-এমন ভাবে মনকে দৃঢ়ভাবে প্রস্তুত করা।
কারণ চিহ্নিত করুন:
নিজের আত্মবিশ্বাসকে দৃঢ করতে সিগারেট ত্যাগ করার কিছু ব্যক্তিগত কারণ খুজে বের করা। তারপর একটি তালিকা তৈরি করে তা প্রতিদিন নিজের সামনে ধরা। যা ব্যক্তিকে মানসিকভাবে প্রেরণা যোগাবে। যেমনঃ "আমি আমার পরিবারের ক্ষতির কারণ হচ্ছি” বা “আমার সন্তান অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে সিগারেটের ধোঁয়ায়”।
মনকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখুন:
উল্লেখিত কাজ দুটি করে আস্তে আস্তে দৈনিক সিগারেট খাওয়ার সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। সিগারেটকে নিজের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে। সিগারেটের ঝোক আসলে সঙ্গে সঙ্গে মনকে অন্য দিকে ব্যস্ত করে তুলতে হবে। গাড়ি, বাড়ি, অফিসে কোথাও হাতের নাগালে সিগারেট না রাখা।
আচরণ ও পারিপার্শ্বিক পরিবর্তন:
যে বা যারা ধূমপানের সঙ্গী ছিল তাদের সাথে মেলামেশা কমিয়ে দিন। আড্ডার স্থান পরিবর্তন করুন।
ধূমপায়ী না এমন মানুষের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা।
ধর্মানুসারে প্রার্থনা করা।
বন্ধু-বান্ধবের সাথে ধূমপানের কুফল নিয়ে আলোচনা করা।
ইতিবাচক চিন্তা করা।
মনে মনে ধূমপানের ফলে সৃষ্ট রোগ-ব্যধির ভীতি তৈরী করা।
প্রতিজ্ঞায় অটল থাকুন:
'ধূমপান ছাড়বোই' মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে অটল থাকতে হবে। এই ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খুবই সহায়ক। যেমনঃ শারীরিক ব্যায়াম করা, বই পড়া , মেডিটেশন করা, ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি। এছাড়া “একটা খাই, আর খাবো না সিগারেট ” এমন প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরি।
সিগারেটের বিকল্প কিছু বেছে নিন:
ধূমপানের নেশা জাগলে বিকল্প হিসেবে স্বাস্থ্যকর কিছু খাওয়ার কিংবা কোন সৃজনশীল কাজ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যেমন- মুখে পুদিনা পাতা, চিউইং গাম চিবানো, আপেল খাওয়া ইত্যাদি।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
দীর্ঘদিন ধূমপানের কারণে দেহের ভিতরে নিকোটিনের একধরনের চাহিদা সৃষ্টি হয়। হঠাৎ ধূমপান ছেড়ে দেয়ার ফলে শরীরে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমনঃ মাথা ব্যথা, মানসিক অস্থিরতা, বমি বমি ভাব হওয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এরকম অবস্থায় চিকিৎসকের সহযোগিতা নেয়া খুবই জরুরি।
Comments
Post a Comment