পরিবেশ দূষণ ও প্রতিকার।
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার:
সৃষ্টির আদি লগ্নে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য ছিল। প্রকৃতি ও পরিবেশের মাঝেই বিচিত্র জীবনের বিকাশ ঘটে। পরিবেশের জন্যই মানুষ ভাল মন্দ হয়। পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজন শান্তিময় সূস্থ পরিবেশ। বেঁচে থাকার জন্য যে পরিবেশের প্রয়োজন, সে পরিবেশ নানা কারনে জটিল আকার ধারন করেছে। মানুষ তার আবিষ্কারের প্রতিভা, পরিশ্রম আর দক্ষতা নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নানা পদ্ধতি সংগ্রহ করেছে। বিজ্ঞান ক্রমবিকাশের ধারায় চরম উন্নতি লাভ করেছে। আর মানুষ সেই গৌরবে অন্ধ হয়ে পৃথিবীর সুন্দর পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে। সাম্প্রতিককালে বিশ্বব্যাপী দূষণের মাত্রা মারাত্মক আকার ধারন করেছে। তাই বিশ্বব্যাপী মানুষ আজ পরিবেশ দূষনের বিরূদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে।
পরিবেশ দূষনের কারন ঃ পরিবেশ দূষনের বিভিন্ন কারন রয়েছে, এগুলো নি——-
(১) জনসংখ্যা বিষ্ফোরন (২) বনশূন্যতা ও মরুকরন (৩) রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যাবহার (৪) যুদ্ধ ও সংঘর্ষ (৫) বায়ু দূষন (৬) শব্দ দূষন (৭) পানি দূষন (৮) মাটি দূষন (৯) গ্রীন হাউস এফেক্ট এবং (১০) রাসায়নিক দ্রব্যের অপব্যাবহার ইত্যাদি।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঃ পরিবেশের হুমকির জন্য যে কারনটা প্রথমেই চিহ্নিত তা হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধি। কারন জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে তার চাহিদা, বাসস্থান, শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র, চিত্তবিনোদনসহ সকল ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পায়। এতে সংকট দেখা দেয়। যেভাবে দিন দিন জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে তাতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে বাধ্য। বিশ্বের যে কোন মেগাসিটির দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। সর্বত্র মানুষ আর মানুষ। যত্র তত্র ময়লা আবর্জনা, রাস্তাঘাট অপর্যাপ্ত অন্যান্য সবকিছুই চাহিদার তুলনায় অল্প। আর এ জন্য দায়ী অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
বনসম্পদ শূন্যতা ও মরুকরন ঃ পরিবেশ দূষনের আর একটি কারন হলো বৃক্ষ নিধন। যার পরিনাম মরুকরন। জ্বালানী কাঠ এবং ঘরের আসবাবপত্র হিসেবে বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। ফলে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। যার ফলে পৃথিবী হয়ে উঠছে মরুময়। আর তাই দেখা দিচ্ছে কখনো অতিবৃষ্টি, আবার কখনো অনাবৃষ্টি। আমরা শুধু বনভূমি হারাচ্ছি না, তার সংগে সংগে ধ্বংস হচ্ছে হাজার হাজার প্রাণী ও উদ্ভিদ।
রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যাবহার ঃ আমরা ভাল ও উন্নত ফসল ফলানোর জন্য সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে থাকি। অপরিকল্পিত ও ব্যাপক হারে কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে জীব জগৎ, পরিবেশ, মাছ ইত্যাদি হুমকির সম্মুখীন।
যুদ্ধ ও সংঘর্ষ ঃ যুদ্ধ মানুষের শুধু জীবন হরনকারী নয়, যুদ্ধের বিভীষিকাময় স্বাক্ষর বহন করছে হিরোশিমা, নাগাসাকি ও ভিয়েতনাম। পরমানু অস্ত্র রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ফলে পরিবেশ মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। তাই পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাড়িয়েছে যুদ্ধ ও সংঘর্ষ।
বায়ু দূষন ঃ মানুষের জীবন ধারনের জন্য মুক্ত বায়ু প্রয়োজন, কিন্তু ময়লা আবর্জনা কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, হাইড্রোজেন, সালফাইড, ক্লোরাইড, হাইড্রোকার্বন সমূহ ফটো কেমিক্যাল অক্সিভেট, বেরিলিয়ান পারদ বায়ুকে দূষন করছে। যার ফলে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন।
শব্দ দূষন ঃ বর্তমানে শব্দ দূষনের প্রধান উৎস হলো গাড়ীর হর্ণ, যানবাহনের শব্দ, মাইকের শব্দ, কল কারখানার নির্গত শব্দ ইত্যাদি এসব বিভিন্ন ধরনের শব্দ প্রচন্ডভাবে পরিবেশকে দূষিত করছে। শব্দ দূষনের ফলে মানুষের শ্রবণ ক্ষমতা লোপ পায় এবং রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে মানসিক বিপর্যয় দেখা দেয়।
পানি দূষণ ঃ পানি দূষণের ফলেও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। যেমন জৈব আবর্জনাসমূহ, অজৈব রাসায়নিক পদার্থ, তেজষ্ক্রিয় পদার্থ সমূহ এবং তেলবাহী জাহাজের তেল সাগরে পড়েও পানি দূষিত হচ্ছে।
রাসায়নিক দ্রব্যের অপব্যবহার ঃ পরিবেশের বৈরী অপদ্রব্যগুলো সীসা, পারদ, সালফার ডাই অক্সাইড ইত্যাদি। কার্বন কনা থেকে শুরু করে ভারী ধাতুগুলো পরিবেশ দূষিত করছে। এর ফলে আবহাওয়ার তাপমাত্রা ক্রমশঃ বেড়ে যাচ্ছে।
দূষনের প্রতিকার ঃ মানুষ পরিবেশের উপাদান, সৃষ্টির সেরা জীব, তাই এর প্রতিকার করা যে কোন মানুষের কাম্য। গ্রীণ হাউজ এফেক্ট রোধ করা যেমন দরকার তেমনি কল কারখানার ধোয়া, গাড়ীর শব্দ, রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা নিয়ন্ত্রন করতে হবে। এ ব্যপারে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে জরুরী ভিত্তিতে নি¤েœ বর্ণিত পদক্ষেপগুলো নিতে হবে।
১। জাতীয় পরিবেশ নীতির সফল বাস্তবায়ন করে আইনগত কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে।
২। বন সম্পদের পরিমান বৃদ্ধি করতে হবে।
৩। নিরাপদ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৪। পরিকল্পিতভাবে নগরায়ন ও শিল্প কলকারখানা স্থাপন করতে হবে।
উপসংহার ঃ আজ আমরা ধ্বংসলীলার চিতার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সভ্যতা মানুষের কল্যানে আসে। তিল তিল করে হাজার বছরের গড়া এ সভ্যতার গতি কোন দিকে? সৃষ্টির না ধ্বংসের? তার উত্তর ধ্বংস, অবশ্যই ধ্বংসের। আর তাই এ ধ্বংসের হাত থেকে পরিবেশকে দূষণমুক্ত ও সুন্দর করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আসুন, একটু সচেতন হই।।।।
Collected
Comments
Post a Comment